পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব তাৎপর্য ও ফজিলত
রমজান বা রমযান (আরবি: رمضان রামাদান, হল ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকে।[ রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
Table of Contents
রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ﺭﻣﻀﺎﻥ শব্দটি ﺭﻣﺾ শব্দ হতে নির্গত। এর অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। রোযা রাখলে গুনাহ মাফ হয়। রমযান গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। তাই এর নাম রমযান। পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনসম্ভোগ হতে বিরত থাকার নাম রোযা। রমযানের রোযা কেন ফরজ করা হয়েছে এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ
ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ١٨٣ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٣ ]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।সম্ভবতঃ এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’’(সূরা আল বাকারা: ১৮৩) এই আয়াতে রোযা ফরয
করার উদ্দেশ্যসম্পর্কে পরিষ্কার বলা হয়েছে। রোযার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন।
মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎً ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎً ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ » ‘যে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।’ এখানে ঈমান বলতে সত্যিকার ও যথার্থ ঈমান এবং সওয়াবের নিয়ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া লোক দেখানো কিংবা অন্য কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে রোযা না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
« ﻛُﻞُّ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻳُﻀَﺎﻋَﻒُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺒْﻌِﻤِﺎﺋَﺔِ ﺿِﻌْﻒٍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟِﻰ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻯ ﺑِﻪِ ﻳَﺪَﻉُ ﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻭَﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ
ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻰ ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻓَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ ﻓَﺮْﺣَﺔٌ ﻋِﻨْﺪَ ﻓِﻄْﺮِﻩِ ﻭَﻓَﺮْﺣَﺔٌ ﻋِﻨْﺪَ ﻟِﻘَﺎﺀِ ﺭَﺑِّﻪِ. ﻭَﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟْﻤِﺴْﻚِ »
‘‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের জন্য ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন, রোযা
এর ব্যতিক্রম। সে একমাত্র আমার জন্যই রোযা রেখেছে এবং আমিই নিজ হাতে এর পুরষ্কার দেবো। সে আমার জন্যই যৌন
বাসনা ও খানা-পিনা ত্যাগ করেছে। রোযাদারের রয়েছে দুইটা আনন্দ। একটা হচ্ছে ইফতারের সময় এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের গন্ধ মেশক- আম্বরের সুঘ্রাণের চাইতেও উত্তম।’’ এই হাদীসে অন্যান্য ইবাদতের সওয়াবের পরিমাণ উল্লেখ করে রোযাকে ভিন্নধর্মী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি নিজ হাতে রোযার সওয়াব দান করবেন এবং সেটা হবে প্রচলিত হিসেবে চাইতে অনেক বেশি। অর্থাৎ আল্লাহ রোযাদারকে রোযার জন্য অনেক
বেশি সওয়াব, পুরষ্কার ও বিনিময় দান করবেন।
রোযার বিশেষ ফযীলত হচ্ছে জান্নাতের রাইয়ান দরজা -এটা রোযাদারের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা।
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺎﺑﺎ ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮﻫﻢ ﻳﻘﺎﻝ ﺃﻳﻦ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻓﻴﻘﻮﻣﻮﻥ ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ
ﻏﻴﺮﻫﻢ ﻓﺈﺫﺍ ﺩﺧﻠﻮﺍ ﺃﻏﻠﻖ ﻓﻠﻦ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ »
‘জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে। রোযাদার ছাড়া আর কেউ সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রোযাদাররা প্রবেশ করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না।
রোজা কাদের উপর ফরজ
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। এ মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরো দেখুনঃ চলমান সকল সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তালিকা
মাহে রমজানের ইতিহাস
রমজান মাস হচ্ছে সেই মাস যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছিল; মানবজাতির জন্য কোরান একটি হেদায়েত এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং মানদণ্ড [সঠিক ও ভুলের]। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকে তবে এই মাসে রোজা রাখ এবং আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান; তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট না চান; আর এটাই যে, তোমার সময়কাল পূর্ণ হবে এবং তোমার হেদায়েতের জন্য আল্লাহকে মহিমান্বিত করতে হবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।[কুরআন ২:১৮৫]